Experience witb very bad people whose are cheat others
মরণ নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা নেই, আজ এ বিষয়টি আমার মাথায় অনেক চিন্তার উদ্রেক হয়েছে। কোন এক কারনে আজ আমি গিয়েছিলাম সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। তো একজনের জন্য অনেকক্ষন অপেক্ষা করছি। সেই সময়ে আমার চোখের সামনে এমন কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, যা নিয়ে আসলেই আমি অনেক চিন্তিত। মানুষ মানুষকে কিভাবে ঠকায় সেটাই আজ দেখলাম। অথচ মানুষকে ধোকা দেওয়া নিয়ে কোরাআনে কত আয়াত আছে। আমরা মুসলমান হিসেবে কিছুই জানি না। জানলেও কিছুই মানি না। সাভারে আজ যা দেখলাম, তা হল যারাই স্মৃতি সৌধ যাচ্ছে, মেইন গেইটে কিছু লোক আছে, যাদের হাতে কিছু ব্যাজ আর রং আর তুলি আছে। সাধারন জনগন যাদের সাথে মহিলা আছে, মূলত তাদেরকেই টার্গেট করে ঐ লোকগুলো। প্রথমে কোন বলা নেই, কথা নেই গিয়েই ব্যাজ টা পরিয়ে দেয়। সম্ভব হলে হাতে একটু আকিঝুকি করে দেয়। তো সাধারন লোকজন ভাবে, ভালই তো, ফ্রি ফ্রি এতো আদর। ব্যাজটার দাম সর্বোচ্চ হলে এক টাকা হবে। এর বেশি না। তো সাধারন লোকজন যাখন ব্যাজ কিরা শেষ, চলে যাচ্ছে, এমন সময় বাটপার লোকটা এমনভাবে সাধারণ লোকটাকে আটকায় টাকার জন্য, কেউ না দেখলে বুঝতেই পারবেন না। সাধারণ লোকটা লজ্জায় ভয়ে পকেট থেকে দশ টাকা দিতে গেলে এমন কিছু কথা বলে, যা লজ্জায় ঐ সাধারণ লোকটা বেশি টাকা দিয়ে বাধ্য করে। লজ্জায় দেয়, কারন, তার সাথে মহিলা আছে। মান সম্মানের ভয়ে হলেও টাকা দেয়। একজন, দুইজন লোকের সাথে এ সব করে না। সাধারণ মানুষ যত আসে, প্রায় সবার সাথেই করে। আমার কথা হলো, এই যে মানুষকে আটাকাইয়া, এভাবে জোর জবরদস্তি করে টাকা নেয়, সেই টাকা আবার পরিবারের লোকজনের ভরনপোষণের জন্য ব্যয় করে। কি কাজে আসবে সেই টাকা খরচের মাধ্যমে। আমি দেখলাম, টাকাটা দেওয়ার পর সাধারণ মানুষজন যে একটা বদ দোয়া দেয়, যার খারাপ ফল আজীবনেও শেষ হবে না। মরার পরেও শেষ হবে না। প্রত্যেকটা সাধারণ মানুষ তাদেরকে অভিশাপ দেয়।
অন্য এক জায়গায় দেখলাম, সাধারণ ৫ টাকার পানির দাম, এক গ্লাস পানির দাম ৩০ টাকা রাখে। প্রথমত দোকানদার কোন দাম বলে না, যতবার জিজ্ঞেস করবে, একবারও বলবেন না দাম। যখন টাকা দিতে যাবে, তখন দাম বেশি রাখলেই সাধারণ মানুষের মাথা খোলে দাম নিয়ে। যখন দেখে, এক গ্লাস শরবতের দাম ৩০টাকা, তখনই শুরু হয়ে যায় দোকানদারের সাথে বাকবিতণ্ডা। শেষ অব্ধই, সাধারণ মানুষই হেরে যায়, কারন আগে দাম না জেনেই খেয়েছে। এখন তো শরবত ফেরত দেওয়া যাবে না। এখানে মানুষকে এতো ধোকা দিচ্ছে, যা কল্পনার বাইরে। একটি বারও চিন্তা করে না দোকানদার এই জুলুমের কথা।
আরেক জায়গায় দেখলাম, ৩০ টাকার হালিম রাখছে ৯০ টাকা। সেই হালিমের দাম ৩০ টাকার বেশি হবেই না। শেষে দোকানদারকে এমন কিছু অভিশাপ এবং কিছু গালী দিয়ে গেল যা সত্যিই খুব খারাপ।
আমি চিন্তা করলাম, এই মানুষগুলো একটি বারও মরনের চিন্তা করে নি। যদি একবার হলেও তারা বুঝত, তারা যে জুলুম করতেছে, সেটার জন্য দুনিয়াতে শাস্তি না পেলেও, কেয়ামতের মাঠে ঠিকই এই জুলুম তার চোখের সামনে দেখানো হবে। তখন কি হবে?
তখন তারা ফেরত দিতে চাইলেও, কিছু করতে পারবে না। দুনিয়াতে একটু লাভের আশায় আখিরাতের কত কিছু হারিয়ে ফেলতেছি, একবার ও চিন্তায় আনছি না। অথচ পবিত্র কুরআন এ এবং নবী সা: কত কিছু বলেছেন এই জুলুমের ব্যাপারে।
পবিত্র কুরআন এ আছে- অনেক শাসক বা জনপ্রতিনিধি এমন আছে যারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রজাসাধারণ বা অধীনস্তদের ধোঁকা দেয় কিংবা বোকা বানায়। প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার প্রতারণা করে। ইসলামে এসব ধোঁকা ও প্রতারণামূলক কাজ হারাম ও কবিরা গুনাহ। শুধু শাসকবর্গই নয় বরং যে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্যই তাদের অধীনস্তদের ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণা করা কবিরা গুনাহ।ইসলামের দৃষ্টিতে দায়িত্বশীল বা শাসকবর্গ কর্তৃক অধীনস্তদের ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণা করা জুলুম বা অত্যাচারের শামিল। আর এটি মারাত্মক হারাম কাজ ও কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহ এ ধরনের ধোঁকা বা প্রতারণামূলক জুলুমের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোরআনুল কারিমের এ আয়াতে তা সুস্পষ্ট-اِنَّمَا السَّبِیۡلُ عَلَی الَّذِیۡنَ یَظۡلِمُوۡنَ النَّاسَ وَ یَبۡغُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অহেতুক বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। তাদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’
মানুষের সঙ্গে ধোঁকা বা প্রতারণা অনেক বড় জুলুম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ধোঁকা-প্রতারণার ধরন ও ভয়াবহতার নমুনা তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- النارأيما راع غش رعيته فهو في :‘যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোঁকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।’ (ইবনে আসাকির , আল-জামে)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-مَنْ وَلَّاهُ اللَّهُ شَيْئًا مِنْ أُمُورِ الْمُسْلِمِينَ فاحْتَجَبَ دُونَ حاجَتِهم وخَلَّتِهِم وفقرهم، احْتَجَبَ الله عنه دون حاجَتِه وخَلَّتِهِ وفقره‘যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, এরপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে; আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার অভাব দূরকরণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।’ (আবু দাউদ)
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- الظلم ظلمات يومالقيامة : ‘অত্যাচার কেয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।’ (বুখারি)
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-من غشنا فليس منا : ‘যে আমাদের ধোকা দেয়; সে আমাদের অন্তভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)
বর্তমান সময়ে ধোঁকা-প্রতারণামূলক ঘটনাগুলো অহরহ ঘটেই চলেছে। মানুষকে ঠকিয়ে, জুলম করে অবৈধ আয়-রোজগারের প্রতিযোগিতা চলছে। যা হালাল নয়। বরং মানুষের প্রতি এগুলো জুলুম। মানুষকে নানান প্রতারণায় ফেলে অর্থ ও স্বার্থ হাসিল করা হারামখোরের কাজ। সব মানুষের জন্যই অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনায়দায়ক।
প্রতারণার ধরনএকদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (কোনো এক) বাজারে স্তুপকৃত খাদ্যের (শস্যের) কাছে গিয়ে তার ভেতরে হাত প্রবেশ করালেন। তিনি আঙুল দ্বারা অনুভব করলেন যে, ভেতরের শস্য ভিজে আছে। বললেন, হে বেপারী! কী ব্যাপার? (ভেতরের শস্য ভেঁজা কেন?)বেপারি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। তিনি বললেন, ভিজেগুলোকে শস্যের ওপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পেত? যে ধোঁকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, আবু দাউদ)
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুলুম তথা ধোঁকা-প্রতারণাকে নিজের প্রতি অস্ত্রধারণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাদিসে এসেছে-‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয় এবং যে মানুষকে ধোঁকা দেয়, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)
সুতরাং হাদিসের পরিভাষায় বিশ্বমানবতার প্রতি সতর্কতা হলো-আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। ধোঁকা ও চালবাজ জাহান্নামে যাবে।’ (তাবারানির কাবির ও সাগির, ইবনে হিব্বান)
হাদিসের অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তার (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য সেই জিনিস পছন্দ করেছে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে হিব্বান)
আমি সবাইকে অবশ্যই বলোব, এই সব জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে অবশ্যই কারো কাছ থেকে খোজ নিয়ে যাবেন। অযথা হুয়রানীর শিকার হবেন না। সারা বাংলাদশে হাজার হাজার মানুষ আছে, যারা অন্যকে ঠকাতে বা অন্যের উপর জুলুম করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।